

“উমানাথপুর: মাত্র ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম গ্রামের গল্প”
ড:মিহির কুমার রায়ঃ শুনতে অবাক লাগে মাত্র ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলো ময়মনসিংহের ‘উমানাথপুর’ গ্রাম । মাত্র ৪ জনের বসবাস থাকা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আলোচিত ‘উমানাথপুর’ গ্রাম ।প্রায় চার মাস আগে গ্রামের মালিক মো. সিরাজুল হক সরকার স্থানীয় আব্দুল মন্নাছের কাছে এটি বিক্রি করেন।২০২৪ সালের ২৪ জুলাই দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মাত্র একটি বাড়িকে ঘিরে একটি গ্রামের অস্তিত্বের খবর প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জানা যায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত উমানাথপুর গ্রামটির আয়তন মাত্র ২৫ শতক জমি। এই জমির মালিক ছিলেন মো. সিরাজুল হক সরকার, যিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মাত্র ৪ জন নিয়ে বসবাস করতেন। এখানে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, একটি ছোট পুকুর ও একটি টয়লেট রয়েছে। তবে, গ্রামে প্রবেশের জন্য অন্যের জমির আইল ব্যবহার করতে হতো। উপজেলার উত্তর দিকে অবস্থিত এই গ্রামের পাশেই রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রশাসনিক কাগজপত্রে উমানাথপুর একটি স্বতন্ত্র মৌজা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ইউনিয়নের মোট ৪৩টি গ্রামের মধ্যে উমানাথপুর ছিল সবচেয়ে ছোট গ্রাম। যেখানে অন্য গ্রামগুলোতে গড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে, সেখানে এই গ্রামে ছিল মাত্র ৪ জন।
ময়মনসিংহের উমানাথপুর গ্রাম, মাত্র ২৫ শতক জমিতে ৪ জনের বসবাস, ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি। কুমিল্লা মডেল গ্রামীণ উন্নয়নে সফল
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাস আগে সিরাজুল হক সরকার ১৫ লাখ টাকায় তার বাড়িটি বিক্রি করে দেন। দলিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মোট ১৭ লাখ টাকা লেগেছে।সাবেক মালিক সিরাজুল হক সরকার বলেন, ‘নিজের জন্য এত বড় বাড়ির দরকার নেই, তাই বিক্রি করে পাশের গ্রামে কম দামে জমি কিনেছি। সেখানেই নতুন বাড়ি করে বসবাস করব। গ্রামটি কিনেছেন পাশের উদয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মন্নাছ। তিনি ঢাকায় ছেলে মোস্তুফা কামালের সঙ্গে ফলের ব্যবসা করেন। মোস্তুফা কামাল জানান, ‘আমার বাবা ১৫ লাখ টাকায় বাড়িটি কিনেছেন, রেজিস্ট্রিসহ খরচ পড়েছে ১৭ লাখ। এখন আমরা পরিবারের ৯ জন সদস্য এখানে বসবাস করছি। আমরা খুবই আনন্দিত, কারণ এটা শুধু একটা বাড়ি নয়, পুরো একটা গ্রামের পরিচয়।’
গ্রামনিয়ে তেমন গবেষনা হয়নি যদিও মিডিয়ার বদৌলতে আমরা কিছু জানতে পারি যেমন পৃথীবির স্বনির্ভর গ্রাম নাটোরের হুলহুলিয়া,,দেশের স্মার্ট ভিলেজ’ হিজলী গ্রাম, বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হবিগন্জের বাণীয়াচং,কুষ্ঠি য়ার ঝগড়াপুর কুমিল্লার আমুয়া ইত্যাদি । গ্রাম গবেষনার দিকপাল বার্ড কর্তৃক উদ্ভাবিত পল্লী উন্নয়নের ‘কুমিল্লা মডেল’ এর জন্য বার্ড দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করে যার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন আখতার হামিদ খান যিনি একজন আন্তর্জ্যৃাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন পদ্ধতির প্রবর্তক ও বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক যার জীবন কাল ১৯১৪-১৯৯৯ইং পর্যন্ত । গবেষনার ফলাফলগুলো ছিল সমাজ বিজ্ঞান মূলক যার ফসল কুমিল্লা মডেল যার মুল বিষয় ছিল স্বল্প সময়ে কার্য্যকর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জন ও জনগনকে উন্নয়নের অংশীদারে পরিণত করন, একটি বিকেন্দ্রীকৃত ও সমন্বিত গ্রামীন প্রশাসন সৃষ্টি, রাস্তা- সেচ- পানি নিষ্কাসনের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা , আধুনিক কৃষির নতুন ধারনা তৈরি, যৌথ উদ্যোগে সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়া ইত্যাদি। কুমিল্লা মডেল চারটি মূল উপদানের গড়া যেমন (১) দ্বি- ¯স্থর বিশিষ্ট সমবায় যার প্রাথমিক ¯স্থর থাকবে গ্রাম পর্যায়ে এবং তাদেরই সমন্বয়ে গঠিত একটি ফেডারেশন থাকবে থানা পর্যায়ে; (২) পল্লী পূর্ত কর্মসূচী যার মধ্যে আছে অবকাঠামো তৈরি ,কর্মসংন্থানন; (৩) প্রশিক্ষনের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন;(৪) সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন। এই চারটি উপাদানই পরবর্তিতে সরকারের কাছে চারটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রুপান্তরিত হয় যেমন সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসুচি ( আই আর ডি পি), ¯’স্থনীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ( এলডিইডি) থানা প্রশিক্ষন ও উন্নয়ন কেন্দ্র ( টিটিডিসি) ও থানা সেচ কর্মসুচি ( টি.আপি) এই প্রত্যোকটি উপাদানই তদানন্তন পাকিস্থন সরকার বাস্তবায়ন করেছিল পল্লীর সার্বিক উন্নয়েন ক্ষেত্রে এই কুমিল্লা মডেলের ব্যাপ্তি তথনকার সময়ের সমাজ ও বাষ্ট্রীয় জীবনে গ্রামীন মানুষের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী কাঠামো হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল ।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক ডিন,ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সিন্ডিকেট সদস্য,সিটি ইউনিভার্সিটি,ঢাকা ।