×

স্মার্ট ভিলেজ হিজলী: টেকসই গ্রামোন্নয়নের পথিকৃৎ এক রূপকথার বাস্তব রূপ

ডঃ মিহির কুমার রায়ঃ ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের হিজলী গ্রামটি দেশের প্রথম “স্মার্ট ভিলেজ” হিসেবে গড়ে উঠেছে। জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে ৩৩৪টি পরিবারের বাস, যেখানে ৫১২ জন নারী ও ৪৯৩ জন পুরুষের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত। একসময় এই গ্রাম ছিল সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার প্রবণতায় জর্জরিত; শিক্ষার হারও ছিল নিম্ন।

বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ উদ্যোগ “আমার গ্রাম, আমার শহর” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হিজলীকে স্মার্ট ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্মার্ট মহিলা ক্লাব, স্মার্ট বৈঠকখানা, স্মার্ট যুব ক্লাব, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি, নারী ও যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন, মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, আর্সেনিক পরীক্ষা এবং তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবাদান। এ গ্রামের নারীরা এখন আত্মবিশ্বাসী ও স্বনির্ভর, বাল্যবিবাহ রোধ হয়েছে, এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারি সেবাও সহজলভ্য হয়েছে।

হিজলী গ্রাম বাংলাদেশের প্রথম স্মার্ট ভিলেজ, যা সরকারের “আমার গ্রাম, আমার শহর” উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। ছয় মাসে কৃষিনির্ভর এই গ্রামে এসেছে প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সচেতনতার বিপ্লব। এটি টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশের একটি অনন্য মডেল।

 

মাত্র ছয় মাসের প্রচেষ্টায় হিজলী এখন একটি আদর্শ স্মার্ট গ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে, যা দেশের অন্য গ্রামগুলোর জন্য একটি রোল মডেল। গ্রামে স্থাপিত হয়েছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সোলার স্ট্রিট লাইট, পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও রান্নাঘরের জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র। এ ছাড়া যুবদের জন্য আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার ২২১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মাধ্যমে ৩২টি পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুপেয় পানি সরবরাহ, গণশৌচাগার, গভীর নলকূপ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শহরগুলোর আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।

সবশেষে বলা যায়, হিজলী গ্রামের স্মার্ট ভিলেজে রূপান্তর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই গ্রামোন্নয়নের অনন্য উদাহরণ। এই মডেলটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথে একটি কার্যকর পদক্ষেপ।

লেখকঃ অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক ডিন,ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সিন্ডিকেট সদস্য,সিটি ইউনিভার্সিটি,ঢাকা ।

 

 

আরও খবর